চবি শিক্ষার্থী-গ্রামবাসী সংঘর্ষ: এক হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা, থমথমে ক্যাম্পাস

ভিসি-প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাটহাজারী থানায় মামলা হয়েছে অজ্ঞাত প্রায় এক হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে। তবে মামলার পরও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।

মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম।

তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দপ্তরের প্রধান বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। এতে নাম উল্লেখ করা হয়েছে ৯৮ জনের এবং অজ্ঞাতনামা ৮০০ থেকে এক হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। পাশাপাশি নিরাপত্তা দপ্তর থেকে দেশীয় অস্ত্র লুটের ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশনস) মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, মামলাটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

একইভাবে হাটহাজারী থানার ওসি আবু কাউসার মোহাম্মদ হোসেনও জানান, বিস্তারিত পরে জানানো হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের হামলার ঘটনায় রোববার রাতে প্রক্টরিয়াল বডি ও প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা দুটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন। এসব অভিযোগের ভিত্তিতেই মামলা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ক্লাস-পরীক্ষা স্বাভাবিক হয়নি; বিকালে বিস্তারিত জানা যাবে।

সংঘর্ষের প্রভাবে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮টি বিভাগ ও ৬টি ইনস্টিটিউটের প্রায় ২৭ হাজার ৫৫০ শিক্ষার্থীর পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে। আগামী ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব পরীক্ষা স্থগিত রাখা হলেও বিভাগীয় সিদ্ধান্ত ও শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত হলে পরীক্ষা নেওয়া যাবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

তবে মঙ্গলবারও ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হননি। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন— হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসএবং পরীক্ষায় অংশ নেবেন না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগ ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তারা একাডেমিক কার্যক্রমে ফিরবেন না। এখনও পর্যন্ত ক্যাম্পাসের পরিবেশ থমথমে রয়েছে।

শনিবার (৩০ আগস্ট) দিবাগত রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকার ভাড়া বাসায় এক নারী শিক্ষার্থী প্রবেশকে কেন্দ্র করে হেনস্তার ঘটনায় শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে গভীর রাত পর্যন্ত ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। রোববার সংঘর্ষ আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। এতে আহত হন প্রোভিসি, প্রক্টরসহ কয়েকশ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, একজনকে নেওয়া হয়েছে ঢাকা।

ভিসি-প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি

চবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে উপাচার্য ও প্রধান প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট।

মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ঝুপড়িতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি এ দাবি জানায়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সংগঠক ধ্রুব বড়ুয়া বলেন, গত ৩১ আগস্ট রাতে এক নারী শিক্ষার্থীর ওপর দারোয়ানের হামলার বিচার চাইতে গেলে স্থানীয়রা বাধা দেয়। একপর্যায়ে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ তন্ময়কে রক্তাক্ত করা হয়। বারবার কল করার পরও প্রক্টরিয়াল বডি কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। কল করা হলে সহকারী প্রক্টর নূরুল হামিদ কানন জানান, স্ত্রী অসুস্থ থাকায় তিনি হাসপাতালে আছেন। প্রধান প্রক্টর তানভীর হায়দার আরিফ কখনো মিটিংয়ে আছি বলেন, কখনো বিস্তারিত জানতে চান। আহত শিক্ষার্থী ও চলমান সংঘর্ষ থাকা সত্ত্বেও তাদের নির্লিপ্ত অবস্থান দায়িত্বহীনতার প্রমাণ।

এ ঘটনার পর গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে—আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং খরচ প্রশাসনের দায়িত্বে রাখা, জোবরার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কার্যকর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা, ক্যাম্পাসে ই-কার বৃদ্ধি এবং ১ ও ২ নম্বর গেট পর্যন্ত চক্রাকার বাস চালু করা, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আবাসনের রোডম্যাপ প্রণয়ন ও আবাসন ভাতা চালু করা, ১ ও ২ নম্বর গেট ও রেলক্রসিংয়ে জোরালো নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় উপাচার্য ও প্রধান প্রক্টরের পদত্যাগ।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ধ্রুব বড়ুয়া, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি জশদ জাকির, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চাকমা, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সহ-সাধারণ সম্পাদক উম্মে সাবাহ তাবাসসুম ও প্রচার সম্পাদক মোশরেফুল হক রাকিব।

জেজে/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm