ডাকসু নির্বাচন: আমার চোখে মূল তিন পদে এগিয়ে যারা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলেও মূলত এটি দেশের জাতীয় রাজনীতির একটা অন্যতম ফ্যাক্টর। সর্বশেষ ডাকসুর ভিপি ছিলেন ‘গণঅধিকার পরিষদ’র সভাপতি নুরুল হক নুর। জাতীয় রাজনীতিতে পরবর্তীতে নুরুল হক নুরের উত্থান সকলেই দেখেছেন।

অন্যবারের চেয়েও এইবারের ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা একটু বেশি। এটাই স্বাভাবিক বিষয়। কারণ, অন্যবারের চেয়েও এইবারের পরিবেশ পরিস্থিতি ভিন্ন এবং এইবারের ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

এবারের ডাকসু নির্বাচনে তারাই জিতবে, যারা প্রকৃত অর্থে শিক্ষার্থীবান্ধব এবং সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানে নিজের জীবন বাজি রেখে সর্বোচ্চ ভূমিকা রেখেছে। এবারের ডাকসু নির্বাচনে সহ-সভাপতি পদে যারা মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন তাদের মধ্যে এই পদে জয়ের অন্যতম হকদার বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা। যেহেতু তিনি দীর্ঘ সময় ধরে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন এবং দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীবান্ধব কাজ করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

তবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম জনপ্রিয় মুখ হওয়ায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীবান্ধব সৃজনশীল উদ্যোগ নিয়ে কাজ করায় বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক আবু সাদিক কায়েম অনেকটা এগিয়ে থাকবেন বলেও আমি মনে করছি। তার সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক এবং সদ্য বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির মুখপাত্র উমামা ফাতেমার।

উমামা ফাতেমা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম ফ্রন্টলাইনার হিসেবে পরিচিত মুখ হওয়ার পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যেও তার জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। তার অন্যতম কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে নিয়মিত সোচ্চার ছিলেন দীর্ঘদিন ধরেই। এছাড়া শিক্ষার্থীবান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে নিজের নাম আলোকিত করেছেন।

যারা সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন, এদের মধ্যে আলোচিত একটি নাম—মাহিন সরকার। যিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন গুরুত্বপূর্ণ সমন্বয়ক ছিলেন এবং পরবর্তীতে জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তবে একটি রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় দায়িত্ব ছেড়ে ডাকসু নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, বিষয়টি ইতিবাচকের চেয়েও নেতিবাচক প্রভাব বেশি ফেলতে পারে। তবে এই বিষয়ে ব্যালট বক্সে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এক্ষেত্রে মাহিন সরকারের সঙ্গে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক এবং বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির সভাপতি এসএম ফরহাদের সঙ্গে।

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ গঠিত হওয়ার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক বিভিন্ন কর্মসূচি করে শিক্ষার্থীদের কাছে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন এই সংগঠনের আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তার অসামান্য অবদান তাকে এগিয়ে রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আমি মনে করছি।

সেইসঙ্গে ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্য রাজনীতিতে আসার পরে আবু সাদিক কায়েমের পরে যে নামটি সর্বাধিক আলোচিত হয়েছে, সেটি হলো এসএম ফরহাদ। তার নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির অনেক সৃজনশীল কার্যক্রম করেছে শিক্ষার্থীবান্ধব এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে সবচেয়ে বেশি প্রোডাক্টিভ কর্মসূচি করেছে ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। সেক্ষেত্রে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে ধারণ করে এমন অনেক শিক্ষার্থীর ভোট পেতে পারেন এসএম ফরহাদ।

সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে যারা মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন, এদের মধ্যে ছাত্রদল সমর্থিত বিজয় একাত্তর হল ছাত্রদলের আহ্বায়ক তানভীর আল হাদী মায়েদ এবং ছাত্রশিবির প্যানেল সমর্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন খানের মধ্যে কিছুটা লড়াই হলেও এক্ষেত্রে আমি এগিয়ে রাখবো বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র আশরেফা খাতুনকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন যৌক্তিক দাবি আদায়ে রাজপথে লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে পরিচিত এক মুখ আশরেফা খাতুন। সর্বশেষ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা পালন করেন আশরেফা। জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীবান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচিতে নিজেকে সংযুক্ত রাখার মাধ্যমে নারী শিক্ষার্থীদের আস্থার জায়গা হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ এর এই কেন্দ্রীয় নেত্রী।

ডাকসুর মোট ভোটারের ৪৭ ভাগ নারী শিক্ষার্থী। তাই এক্ষেত্রে নারীদের ভোটগুলো নির্বাচনের ফলাফলে বড় ভূমিকা রাখে। তাই যে সকল প্রার্থী তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে নারীবান্ধব যৌক্তিক কর্মকাণ্ডকে যুক্ত করে প্রচার প্রচারণা করে, নারী শিক্ষার্থীদের মন জয় করতে পারবে, তারাই নির্বাচনে জয়ের ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm