আড়াই মাসে ৪২ জনকে সাপে কাটল বোয়ালখালীতে, অ্যান্টিভেনম খুঁজতে অ্যাপ চালু
রাতের বেলা বেরোতে ভয় মানুষের
চট্টগ্রামের গ্রামাঞ্চলে বেড়েছে সাপের উপদ্রব। বিষধর সাপের আতঙ্কে রাতের বেলা চলাফেরা বন্ধ করে দিয়েছেন অনেকে। মূলত বর্ষাকাল হওয়ায় সাপ আবাসস্থল ছেড়ে মানুষের ঘর-বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছে। আর এতেই বাড়ছে বিপদ। এর মধ্যে বোয়ালখালী উপজেলায় আড়াই মাসে ৪২ জনকে সাপে কামড়েছে, মারা গেছেন একজন।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সাপের উপদ্রব দেখা গিয়েছে। সাপের কামড়ে এক যুবক সম্প্রতি মারাও গেছেন। এলাকার মানুষ সাপ দেখলেই মেরে ফেলছেন।
এদিকে সাপে কাটলে কী করতে হবে, কোথায় অ্যান্টিভেনম মিলবে—এসব তথ্য সাধারণ মানুষকে জানাতে একটি অ্যাপ চালু করেছে বন বিভাগ।
আড়াই মাসে ৪২ জন আক্রান্ত
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্যমতে, চলতি বছরের জুন থেকে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত ৪২ জনকে সাপে কেটেছে। এর মধ্যে মারা গেছেন একজন। জুন মাসে সাপের কাটা ৪ জন রোগী ভর্তি হন হাসপাতালে। এদের মধ্যে ২ জন পুরুষ ও ২ জন মহিলা।
জুলাই মাসে ভর্তি হন ৮ জন, এদের ৭ জন পুরুষ ও ১ জন মহিলা। এছাড়া ১৬ আগস্ট পর্যন্ত ২৯ জন রোগী ভর্তি হন, যাদের ১৫ জন পুরুষ ও ১৪ জন মহিলা।
গত ৪ আগস্ট সাপের কামড়ে করলডেঙ্গা ইউনিয়নের তালুকদার পাড়ায় আরমান তালুকদার (২১) নামে এক যুবক মারা গেছেন। তিনি স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল মাবুদ জহির তালুকদারের দ্বিতীয় ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, ৪ আগস্ট রাত ১০টার দিকে ঘরে শুয়ে পা জানালার দিকে তুলে মোবাইল ব্যবহার করছিলেন আরমান। জানালার পাশে থাকা একটি বিষধর সাপ তাকে কামড় দেয়। মোবাইলে ব্যস্ত থাকায় তিনি তা অনুভব করতে পারেননি। পরে অসুস্থতা অনুভব করলে বিষয়টি বুঝতে পারেন। এরপর রাতেই পরিবারের সদস্যরা প্রথমে তাকে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে রাত আড়াইটার দিকে তার মৃত্যু হয়।
শাকপুরা এলাকার বাসিন্দা আতাউর রহমান চৌধুরী রানা বলেন, ‘সম্প্রতি সাপের উপদ্রব দেখা যাচ্ছে। এক যুবক মারাও গেছে। কয়েকটি সাপ স্থানীয়রা মেরে ফেলেছে। স্থানীয় মানুষজন আতঙ্কে রয়েছেন। আমরা সাপ নিধনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
অ্যান্টিভেনম প্রস্তুত, জানালেন ডাক্তার
সাপের কামড়ে আক্রান্ত রোগীর জন্য অ্যান্টিভেনমসহ যাবতীয় চিকিৎসাসামগ্রী প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জাফরিন জাহেদ।
ডা. জাফরিন জাহেদ বলেন, আমরা অ্যান্টিভেনমসহ সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসাসামগ্রী প্রস্তুত রেখেছি। আমাদের সকল চিকিৎসককে সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া যেকোনো সময় চিকিৎসকরা যাতে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ পেতে পারেন, সেজন্য একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞকে ফোকাল পারসন হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জনসাধারণকে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হতে হবে।
অ্যান্টিভেনমের তথ্য জানাবে ‘অ্যাপ’
সাপে কামড়ালে আক্রান্ত ব্যক্তির কোথায় পাবেন অ্যান্টিভেনম, সেসব বিষয় জানাবে ‘সর্প দংশনে সচেতনতা অ্যাপ’। এছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তিকে কী করতে হবে তাও জানা যাবে বন বিভাগের এই অ্যাপে।
টেকসই বন ও জীবিকা প্রকল্পের আওতায় তৈরি করা অ্যাপটি সাজানো হয়েছে ১০টি ক্যাটাগরিতে। এর মধ্যে রয়েছে—সাপের পরিচিতি, সাপের কামড়ে প্রাথমিক চিকিৎসা, সাপের কামড়ের তথ্য প্রদান, অ্যান্টিভেনমের প্রাপ্যতা, সাপ–সম্পর্কিত কুসংস্কার ও সাপের গুরুত্ব, সাপ–সম্পর্কিত ভিডিও ও সাপ উদ্ধারে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা, বাংলাদেশে সাপের প্রজাতি, যোগাযোগ ও জাতীয় জরুরি নম্বর।
এতে বিষধর, মৃদু বিষধর ও নির্বিষ সাপের পরিচিতি দেওয়া হয়েছে। কোন সাপে কোন ধরনের বিষ রয়েছে, কোন সাপের কামড়ে কী রকম লক্ষণ আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে দেখা দেয়, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য আছে। আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য অ্যান্টিভেনম পেতে দেওয়া হয়েছে নিকটস্থ হাসপাতালের ফোন নম্বর।
গুগল প্লে-স্টোর থেকে ডাউনলোড করা যাবে অ্যাপটি। অ্যাপে দেওয়া হয়েছে সাপ উদ্ধারকারী দলের ফোন নম্বর। বসতবাড়ি বা ভিটায় সাপের দেখা গেলে উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা এসে সাপ উদ্ধার করবে।
ডিজে