যে চারটি বিশেষ আমল রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনও পরিত্যাগ করেননি
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পুরো জীবনই আমলে ভরপুর ছিল। এক কথায় বলতে গেলে, তাঁর প্রতিটি কাজ কল্যাণ ও নেয়ামতে পরিপূর্ণ ছিল। তিনি নিয়মিত চারটি আমল করতেন, যা কখনোই পরিত্যাগ করতেন না।
এই চারটি আমলের মধ্যে একটি প্রতিদিনের নিয়মিত আমল। একটি প্রত্যেক মাসের নিয়মিত পালন করতেন। আর দুটি নির্ধারিত দুই মাসে পালন করতেন। হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতিটি কাজই আমাদের জন্য অনুসরণীয় অনুকরণীয়। তিনি কীভাবে খেয়েছেন কীভাবে চলেছেন। কোন কোন কাজগুলো ত্যাগ করেছেন। কোন কাজ গুলো বেশি করেছেন সেগুলো অনুসরণ করা। এমন কিছু আমল আছে যেগুলো রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো ছাড়তেন না। সেগুলোর মধ্য থেকে চারটি আমল উল্লেখ করা হলো। উম্মুল মুমিনিন হাফসা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি বছরই জিলহজের প্রথম নয় দিন রোজা রাখতেন। তিনি বলেন নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো চারটি আমল পরিত্যাগ করেননি। সেগুলো হলো আশুরার রোজা, জিলহজের প্রথম দশকের রোজা, প্রতি মাসে তিন দিন রোজা, ও ফজরের পূর্বের দুই রাকাত নামাজ।
উম্মুল মুমিনিন হাফসা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবিজী (সা.) প্রতি বছর জিলহজের প্রথম নয় দিন রোজা রাখতেন এবং কখনোই চারটি আমল পরিত্যাগ করতেন না। সেই চারটি আমল হলো—
১. আশুরার রোজা
মহররম মাসের দশম দিনকে আশুরা বলা হয়, এবং এদিনের রোজার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) আশুরার রোজাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন এবং অন্য কোনো নফল রোজার ক্ষেত্রে তেমন গুরুত্ব দিতে দেখা যায়নি।
২. রমজানের শেষ দশকের ইতেকাফ
ইতেকাফ অর্থ অবস্থান করা। ইসলামের পরিভাষায় ইতেকাফ হলো মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জামে মসজিদে অবস্থান করা। মদিনায় অবস্থানকালে রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি বছর ইতেকাফ পালন করতেন। ব্যস্ততা সত্ত্বেও রমজানে তিনি ইতেকাফ ছাড়েননি। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন এবং বলতেন তোমরা রমজানের শেষ দশকে শবে কদর অনুসন্ধান করো। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) প্রতি রমজানে ১০ দিন ইতেকাফ করতেন তবে যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন সে বছর তিনি ২০ দিন ইতেকাফে কাটান। আল্লাহ্তাআলা ইরশাদ করেন ওয়া আনতুম আকিফুনা ফিল মাসজিদ তোমরা মসজিদে ইতিকাফ করো। ইতিকাফ শব্দের অর্থ নিজেকে আবদ্ধ রাখা। শরিয়তের পরিভাষায় ইতিকাফ হলো মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের আশায় শর্ত সাপেক্ষে নিয়তসহকারে পুরুষেরা মসজিদে ও নারীরা ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করা। রমজানের শেষ দশক (২০ রমজান থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব থেকে শাওয়াল মাসের চঁদ দেখা পর্যন্ত) ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া। বিনা প্রয়োজনে অর্থাৎ গোসল খাবার প্রস্রাব-পায়খানা ব্যতীত অন্য কোনো অজুহাতে ইতিকাফের স্থান ত্যাগ করতে পারবে না। ইতিকাফ অবস্থায় কোরআন তিলাওয়াত জিকির নফল নামাজ ইত্যাদিতে মশগুল থাকবে। প্রকৃতপক্ষে রমজান হলো পূর্বের সকল গুনাহর জন্য ক্ষমা চেয়ে সাচ্চা মুসলমান হয়ে জীবনযাপনের প্রতিজ্ঞা করার মাস।
৩. আইয়ামে বিজের রোজা
আবু জর গিফারি (রা.) বর্ণনা করেন রাসুল (সা.) বলেছেন হে আবু জর যদি তুমি প্রতি মাসে তিন দিন রোজা পালন করতে চাও তাহলে (প্রতি চাঁদের) ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে তা পালন করো। রাসুল (সা.) প্রতি চাঁদের এই তিন দিন নিয়মিত রোজা রাখতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন রাসুল (সা.) বাড়িতে থাকা অবস্থায় বা সফরে থাকা অবস্থায় কখনোই আইয়ামে বিজের রোজা ছাড়তেন না।
৪. ফজরের আগের দুই রাকাত নামাজ
উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বলেন রাসুল (সা.) জোহরের পূর্বে চার রাকাত এবং (ফজরের পূর্বে) দুই রাকাত নামাজ ছাড়তেন না। এক হাদিসে এসেছে, “ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামাজ দুনিয়া ও তার মধ্যকার সবকিছুর চেয়ে উত্তম।”
উপসংহার
একজন মুমিনের উচিত এই চারটি গুরুত্বপূর্ণ আমল নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করা। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে এই সুন্নত ও নফল আমলগুলোর প্রতি যত্নবান হওয়ার তাওফিক দান করেন। আমিন।
লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট