শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় ক্রেতার ভিড় অভিজাত শপিংমলে, ফুটপাতেও রমরমা

ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ক্রেতাদের ভিড়ে জমজমাট শপিংমলগুলো। ফুটপাতের দোকানগুলোতে মানুষের উপচেপড়া ভিড়। ঈদকে সামনে রেখে বাহারি ডিজাইনের পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছে অভিজাত শপিংমল ও ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা। বাহারি ডিজাইনের পোশাক কিনতে ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছে সে সব দোকানগুলোতে।

শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় ক্রেতার ভিড় অভিজাত শপিংমলে, ফুটপাতেও রমরমা 1

বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) নগরীর মার্কেটগুলো সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শেষ মুহূর্তে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। প্রতিবারের মতো এবারেও ঈদবাজারে নারী ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে থ্রি-পিস। এছাড়া বিভিন্ন দেশীয় ও বিদেশি শাড়ি বিক্রি হচ্ছে বেশ। পোশাকের কেনাকাটা শেষে প্রসাধনী কিনতে কসমেটিকসের দোকানগুলোতেও ভিড় জমাচ্ছেন মেয়েরা।

শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় ক্রেতার ভিড় অভিজাত শপিংমলে, ফুটপাতেও রমরমা 2

ছেলেদের পছন্দের তালিকায় জিন্স প্যান্ট, গ্যাবার্ডিন, টি-শার্ট, শর্টস ও পাঞ্জাবি।

শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় ক্রেতার ভিড় অভিজাত শপিংমলে, ফুটপাতেও রমরমা 3

ঈদের শেষ মুহূর্তে রিয়াজউদ্দিন বাজার, বিপণী বিতান, স্যানমার, ফিনলে স্কয়ার, সাউথ ফিনলে,বালি আর্কেড, আখতারুজ্জামান সেন্টার, আফমি প্লাজা, মিমি সুপার মার্কেট, ইউনেস্কো সিটি সেন্টারে ক্রেতাদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। অন্যান্য বারের তুলনায় এবার শপিংমলের শোরুমগুলোতে রয়েছে বিশেষ ছাড়ও।

ব্যবয়ায়ীরা জানান, গতবছরের তুলনায় মোটামুটি ভালোই বিক্রি হচ্ছে। এবারের নতুন পণ্যের তুলনায় স্টকের পণ্যগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া পণ্যের ওপর বিশেষের ছাড়ের কারণে ক্রেতারা কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করছে।

বালি আর্কেডে কেনাকাটা করতে আসা নাইব হোসাইন বলেন, শপিং মলগুলোতে এবার কাপড়ের কালেকশন ভালোই। দামের সঙ্গে মিল রেখে পোশাকের দামটা পাওয়া যায় সেজন্য শপিংমলগুলোতে আসায় হয়। তাছাড়া এক মলে বিভিন্ন ব্র্যালন্ডের পোশাক দেখতে পাওয়া যায়, সেজন্য শপিংমল আসা।

বালি আর্কেড পাকিস্তানি ও ভারতীয় পণ্যের ব্যবসায়ী কাউসার হাসান বলেন, এবার মোটামুটি ভালোই পোশাক বিক্রি হচ্ছে। দামও বাজেট ফ্রেন্ডলি। পাকিস্তানি পোশাকের এবার চাহিদা বেশি। বাংলাদেশে যথেষ্ট পরিমাণ পাকিস্তানি পণ্য এসেছে যা আমাদের ঈদের চাহিদার জন্য যথেষ্ট। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সমালোচনা হচ্ছে এবার পাকিস্তানি পোশাক আসেনি। আসলে বিষয়টি সত্য নয়। আমরা সহ অনেক ব্যবসায়ী ভারতীয় ও পাকিস্তানি পোশাক আমদানি করেছি এবং ত্রেতার যাচাই-বাছাই করেই ক্রয় করছে।

নগরীর বিভিন্ন শপিং মলগুলোতে দেখা গেছে, দেশি বিদেশি মেয়েদের বিভিন্ন ডিজাইজনের লেহেঙ্গা ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। নরমাল থ্রি-পিস ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।এবারের ভারতীয় পণ্য কম আমদানি হলেও সেগুলোও বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায়। পাকিস্তানি থ্রিপিস বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার থেকে শুরু করে ৯ হাজার টাকায়।

এছাড়াও দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে শাড়ি, টু-পিস, থ্রি-পিস, বোরখা, ছোটদের পোশাক, লেহেঙ্গা, জয়পুরী, বুটিকস, দেশীয় সূতি, প্রসাধনীর।

ছেলের জন্য রয়েছে জিন্স জাতীয় প্যান্ট, গ্যাবার্ডিন, টি-শার্ট, শর্টস ও পাঞ্জাবী। ক্রেতারা বাজেট ফ্রেন্ডলি জুতা-স্যান্ডেল কিনছে ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকায়। পরিচিত ব্র্যাগন্ডের জুতা কিনতে ক্রেতারা খরচ করছেন সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা।

রিয়াজউদ্দিন বাজারের জুতা কিনতে আসা হাসান মিরাজ বলেন, এখানে বিভিন্ন ব্র্যারন্ডের জুতা রয়েছে। কিছুটা দেখেশুনে কিনতে হয়। দরদাম করে মোটামুটি কম দামেই জুতা পাওয়া যায়। টেকসই মোটামুটি ভালোই।

এছাড়া আগ্রাবাদ মোড় আখতারুজ্জামান সেন্টারের পেছনের ফুটপাতগুলোতে বিভিন্ন নামি-দামি ব্র্যান্ডের হরেক রকমের জুতার পসরা সাজিয়ে বসেছে ব্যবসায়ীরা সন্ধ্যার পর থেকে জমে ওঠে।

তবে রিয়াজউদ্দিন বাজার সংলগ্ন জহুর হকার্স, বিপণী বিতান, তামাকমুণ্ডি লেইন ক্রেতাদের ভিড় বেশি দেখা গেছে। রাস্তা দখল করে হকারদের রমরমা ব্যবসা চলছে। এসব দোকানগুলোতে নিম্নশ্রেণির মানুষ নিজের পছন্দসই পণ্যটি হাসিমুখে কিনে নিচ্ছেন। দামও হাতে নাগালে ১৫০ টাকার মধ্যে শার্ট কিংবা ২৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে প্যান্ট কেনা যাচ্ছে। ৩০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে জুতা কিনছে ক্রেতারা।

বিপণি বিতানে শাড়ি, শার্ট, পাঞ্জাবি, থ্রিপিস, বোরকা, জুতো, মোবাইল, ঘড়ি, ব্যাগ-লাগেজ, টেইলারিং, কসমেটিকস জিনিস কিনতে ভিড় জমাচ্ছে ক্রেতারা।

গৃহিণীরা নিজে ও পরিবারের শপিং শেষে গৃহস্থালি, ঘর সাজানোর নানা পণ্য কিনতে ব্যবস্থ সময় পার করছে নগরীর গোলাম রসুল মার্কেটে।

গৃহিণীর নুসকা ইসলাম বলেন, নিজের ও পরিবারের শপিং মোটামুটি শেষ। কয়েকদিন পর ঈদ ঘরটাকে নতুন করে সাজাতে কিছু জিনিস কিনতে এসেছি। ঘর সাজানোর জিনিসপত্রের দাম কিছুটা বেশি, কিন্তু সুন্দর সুন্দর কালেকশন এসেছে।

এর মধ্যে ঈদের পোশাকের শপিং শেষে তরুণীরা মেহেদি কিনতে ভিড় জমাচ্ছে মেহেদী দোকানগুলোতে। তাদের জন্য নগরীর শপিং মল থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে মেহেদী উৎসব পালন করছে অনলাইন ব্যবসায়ীরা।

নগরীর টেরীবাজারে বিদেশি কাপড়, পাঞ্জাবি-শাড়ি ও থান কাপড় কিনতে ভিড় জমাচ্ছে ক্রেতারা। তবে রোজার প্রথম দিকে ক্রেতাদের ভিড় থাকলেও শেষের দিকে ক্রেতা সমাগম কিছুটা কম এসব মার্কেটে।

টেরীবাজারে কেনাকাটা করতে আসা মুজাফফর আহমদ বলেন, রোজার শুরুর দিকে বউ-বাচ্চাদের শপিং করে ফেলেছি, কারণ সেলাইয়ের কাজের একটা বিষয় আছে। তখন মোটামুটি দামেই পোশাক কিনতে পেরেছি। এখন নিজের জন্য কিনতে আসলাম।

টেরিবাজারের শাড়ি বিক্রির প্রতিষ্ঠান ‘রাজকুমারী’র বিক্রেতারা জানান, আসলে অন্যান্য বছরের তুললায় এ বছর ক্রেতা কিছুটা কম। কিন্তু এবার ঈদ কালেকশন অনেক ভালো। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় মানুষের হাতে টাকার শর্ট, যার জন্য ক্রেতা কিছুটা কম। রোজার প্রথম দিকে বেচাকেনার ভালো ছিল। কিন্তু এখন কিছুটা কম। আমদানিকৃত পণ্য চাঁদ রাতের দিকে আশা করি বিক্রি হয়ে যাবে। যেগুলো রয়ে যাবে ঈদের পরে ইনশাআল্লাহ বিক্রি হয়ে যাবে। আমরা তো আর একদিনের ব্যবসায়ী না।

টেরীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল মনসুর বলেন, রোজার শুরুর দিকে যথেষ্ট কাস্টমার ছিল, কিন্তু শেষের দিকে কাস্টমার নাই। ব্যবসায়ীরা হতাশ। এবার কিন্তু দ্রব্যমূল্যের দাম আগের তুলনায় অনেক ভালো। অন্যান্য বার আমাদের দেশীয় বাজার ভারতীয় পণ্যের দখলে থাকতো। কিন্তু এ বছর ভারতীয় পণ্য এবার তেমন আসে নাই। আগের তুলায় তিন ভাগের এক ভাগ। কিন্তু দেশীয় পণ্যের বাজার এবার ভালো।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm