সন্তানের দ্বীনি শিক্ষা মুসলিম পিতা-মাতার অপরিহার্য দায়িত্ব

আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।’ একজন নেতা, একজন পিতা, একজন স্ত্রী কিংবা একজন ভৃত্য—প্রত্যেকে তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে আল্লাহর সামনে জবাবদিহি করবে। পিতা-মাতার দায়িত্ব শুধুমাত্র সন্তানদের খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের বন্দোবস্ত করা নয়; তাদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা, ইসলামী শিক্ষা, মূল্যবোধ ও শিষ্টাচারের মাধ্যমে গড়ে তোলাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আজকের সমাজে অনেক বাবা-মা মনে করেন সন্তানদের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বসবাসের ব্যবস্থা করাই যথেষ্ট। কখনো খেলাধুলা বা বস্তুগত সুবিধা যোগ করা হয়। কিন্তু আত্মার, অর্থাৎ রুহের খোরাক—ইসলামী শিক্ষা—প্রায়শই উপেক্ষিত থাকে। বাস্তবে মানুষের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন রুহের খোরাক, এরপর বুদ্ধি এবং তারপর দেহের যত্ন।

সন্তানকে শুধুমাত্র দুনিয়ার জন্য নয়, আখেরাতের প্রস্তুতির জন্যও শিক্ষা দিতে হবে। পারলৌকিক জ্ঞান, শরিয়তের যাবতীয় হুকুম-আহকাম, নামাজ, কোরআন শিক্ষা, হালাল-হারাম ও নবীজির (সা.) প্রতি বিশ্বাস—এই সব বিষয়ে শিশুদের পরিচিত করা অপরিহার্য। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জ্ঞান অর্জন প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরজ।’ তাই সন্তানকে কেবল কালেমা শেখানো নয়, ঈমান ও তাওহিদ সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা দেওয়া জরুরি।

জুনদুব বিন আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, আমরা নবীজির (সা.) সঙ্গে থাকাকালীন প্রথমে ঈমান শিখতাম, এরপর কোরআন। এতে আমাদের ঈমান বহুগুণ বৃদ্ধি পেত। শিশুর কথা বলার শুরুতেই ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ শেখানো উচিত। পিতামাতার অবশ্যই ভাবা উচিত—আমাদের সন্তান কোথায় যাচ্ছে এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)এর সাহাবির সন্তানদের সঙ্গে তাদের অবস্থান কেমন। আল্লাহ যাকে হেদায়েত করতে চান, তার বুক খোলা করেন; যাকে ভ্রষ্ট করতে চান, তার বুক সংকীর্ণ করে দেন (সুরা আনআম: ১২৫)।

আজকাল অনেক পরিবার সন্তানের লক্ষ্য হিসেবে শুধু ভালো চাকরি বা আয়ের দিকে নজর রাখে। অথচ পরকালীন জীবন, যেখানে প্রতিটি কর্মের হিসাব-নিকাশ হবে, সে বিষয়ে সচেতন হওয়ার প্রয়োজন অপরিহার্য। মুসলিম পিতা-মাতার অন্যতম দায়িত্ব হলো সন্তানকে দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত করা। জাগতিক শিক্ষার উচ্চতম ডিগ্রি অর্জন করলেও দ্বীনি শিক্ষার অভাবে সন্তানরা ইসলামের মূল নীতি থেকে বিচ্যুত হতে পারে। বর্তমান সমাজের বাস্তবতা হলো—অনেক সন্তান শুধু জাগতিক শিক্ষা পায়, কিন্তু নামাজ, রোজা, কোরআন ও ইসলামিক অভ্যাস শেখার সুযোগ পায় না।

ধর্মীয় জ্ঞান ছাড়া মানবিক গুণাবলীর বিকাশও অসম্পূর্ণ থাকে। মা-বাবার প্রতি দায়বোধ কমে যায় এবং অনেক সময় তারা বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানো হয়। দ্বীনি শিক্ষিত সন্তানরা অন্যায়ের প্রতি সংবেদনশীল এবং মা-বাবার প্রতি দায়িত্বশীল হয়। তাই সন্তানদের অবশ্যই ইসলামী শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। জাগতিক শিক্ষার সঙ্গে দ্বীনি শিক্ষার সংমিশ্রণ নিশ্চিত করা উচিত, যাতে তারা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান মেনে চলা অপরিহার্য মনে করে।

আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেছেন, পিতামাতাকে তাদের সন্তানদের ভালো শিক্ষায় ও উত্তম শিষ্টাচারে শিক্ষিত করতে হবে। নবীজির (সা.) বলেছেন, কোনো পিতা তার সন্তানকে ভালো আদবের চেয়ে উত্তম উপহার দিতে পারেননি। শৈশব থেকেই সন্তানদের ঈমান, আকিদা ও ইসলামী মূল্যবোধে গড়ে তোলা একটি আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্বারা সম্ভব। আল্লাহতাআলা সকল মা-বাবাকে সন্তানদের দ্বীনি শিক্ষাদীক্ষায় আগ্রহী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm