ঢাকার বুকে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীর ৭০ ভরি সোনা লুট, সাত মাস পর তিন পুলিশ ধরা

বিমানবন্দর থেকে শুরু, ৩০০ ফিটে শেষ

ঢাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বাসিন্দা এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৭০ ভরি সোনা লুট হয় চার পুলিশ সদস্যের হাতে। ঘটনার সাত মাস এ নিয়ে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মামলা করার পর গ্রেপ্তার হয়েছেন তিন পুলিশ সদস্যসহ মোট চারজন। অভিযুক্তদের মধ্যে কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এক উপপরিদর্শক (এসআই) এবং দুই কনস্টেবল রয়েছেন। গ্রেপ্তার হয়েছেন মাইক্রোবাস চালকও— যিনি সরাসরি অপহরণ ও ডাকাতির কাজে অংশ নেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

ঘটনার পেছনের কাহিনি

ঘটনাটি ঘটে ২০২৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম তার খালা সাজিয়া সুলতানা ও খালাতো বোন জিনাত সুলতানাকে সঙ্গে নিয়ে পারিবারিক একটি বিয়েতে যোগ দিতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসেন। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে একটি প্রাইভেট কারে চড়ে তারা রওনা দেন পুরান ঢাকার উদ্দেশ্যে। কিন্তু এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা পার হওয়ার পরপরই ঘটে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা।

একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস, যার গায়ে পুলিশের স্টিকার লাগানো ছিল, হঠাৎ তাদের গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। সেখান থেকে চারজন ব্যক্তি নেমে নিজেদের যৌথবাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে ব্যবসায়ী সাইফুলকে হাতকড়া পরিয়ে গারিতে তুলে নেয়। মাইক্রোবাসের জানালাগুলো ছিল কালো রঙের, যেন বাইরে থেকে কিছুই দেখা না যায়।

গাড়ির ভেতরে নিয়ে গিয়ে সাইফুল ও তার আত্মীয়দের মারধর করা হয় এবং হুমকি দেওয়া হয়—তাদের বিরুদ্ধে মাদকের মামলা দেওয়া হবে কিংবা গুলি করে হত্যা করা হবে। ভয় দেখিয়ে তাদের সঙ্গে থাকা ৭০ ভরি সোনা লুটে নেওয়া হয়, যা বর্তমান বাজারে আনুমানিক ৭৫ লাখ টাকার সমান। এরপর তাদের ফেলে দেওয়া হয় ঢাকার অদূরে ৩০০ ফিট এলাকায়।

তদন্ত ও গ্রেপ্তার অভিযান

এই ভয়ানক ঘটনার পরও ভয়ে মামলা করতে সাহস পাননি সাইফুল ইসলাম। অবশেষে চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি তিনি রাজধানীর সংশ্লিষ্ট থানায় ডাকাতি ও অপহরণের মামলা করেন।

মামলার তদন্তভার পান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের রমনা জোনের এসআই মো. ইরফান খান। তিনি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ শুরু করেন এবং চিহ্নিত করেন ঘটনাস্থলে থাকা দুটি মুখ—পুলিশ কনস্টেবল মিজানুর রহমান ও মাইক্রোবাস চালক আবদুস সালাম।

সাইফুলের মামলা দায়েরের পরদিনই গ্রেপ্তার করা হয় আবদুস সালামকে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৯ মার্চ গ্রেপ্তার করা হয় কনস্টেবল মিজানুর রহমানকে। এরপর আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে মিজানুর রহমান স্বীকার করেন পুরো পরিকল্পনার মূল হোতা ছিলেন কুমিল্লা জেলা ডিবির এসআই রিপন সরকার।

মিজানুরের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় এসআই রিপন সরকার এবং আরেক পুলিশ কনস্টেবল আবু বকরকে। বর্তমানে এই চারজনই কারাগারে রয়েছেন। তবে এখনও পলাতক রয়েছে আরও একজন পুলিশ সদস্য, যিনি এই চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm