বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ আর মৌসুমি বড় জোয়ারের সঙ্গে ভারী বৃষ্টিতে সেন্টমার্টিন দ্বীপের শতাধিক ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। জোয়ারের পানি ৪ থেকে ৫ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হয়ে দ্বীপের চারপাশে দিয়ে পানি ঢুকে পড়েছে লোকালয়ে। লবণাক্ত হয়ে গেছে টিউবওয়েল ও কূপের পানি। এছাড়া সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে ঘাটে নোঙরে থাকা ছোট-বড় ছয়টি মাছ ধরার ট্রলার বিধ্বস্ত হয়েছে।
২৬ মে থেকে ৩১ মে দুপুর পর্যন্ত টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সরবরাহ না থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে দ্বীপে।
মূলত দ্বীপের স্লুইস গেট খালটি খনন না করার কারণে পানিবন্দি হয়ে মাদমবনীয়া, কোনারপাড়া, মরংচড়া, লম্বাঘর, পুর্বপাড়া, গলাচিপা, হলবইন্না, দক্ষিণপাড়া, উত্তরাংশসহ দ্বীপের শতাধিক ঘরবাড়ি ডুবে গেছে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা আবদুল মালেক বলেন, বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ থেকে দিনদিন পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার কারণে পৃথিবীর নিম্নাঞ্চলগুলোতে পানি বাড়ছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপে টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় এবারের জলোচ্ছ্বাসে দ্বীপের চারপাশ থেকে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। জীবনে কখনো এতো বড় জলোচ্ছ্বাস আমি দেখিনি। দ্বীপের নিম্নাঞ্চলে থাকা শতাধিক বাড়িতে পানি ঢুকেছে। আরও অনেক বাড়ির সামনে জোয়ারের পানি চলে এসেছে। আমরা দ্রুত একটা টেকসই বেড়িবাঁধ চাই।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম বলেন, বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি জোয়ারের পানি বেড়ে গেছে। এতে দ্বীপের গলাচিপা, কোনাপাড়া, দক্ষিণপাড়া পানিতে তলিয়ে গেছে। ভাটা হলে পানি কিছুটা কমে যাবে মনে হচ্ছে। এতে শতাধিক বসতবাড়ি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া মাছ ধরার ৬টি ট্রলার জোয়ারের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে। রাতে বাতাস একটু কমেছে। তারপরও আমরা হোটেল-রিসোর্টসহ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তত রেখেছি।
তিনি বলেন, বিএন স্কুল ও হাসপাতালে আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছে। নৌ-চলাচল বন্ধ থাকায় দ্বীপের মানুষের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। দ্বীপের মানুষের খুব খারাপ সময় পার করছেন। তার ওপর শনিবার ৩১ মে সকাল থেকে আবারও বাতাসের তীব্রতা বেড়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, বঙ্গোপসাগরে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় জোয়ারের পানি সেন্টমার্টিনদ্বীপের লোকালয়ে ডুকে পড়েছে। ঘাটে নোঙরে থাকা মাছ ধরার ট্রলার বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পেয়েছি। আতঙ্কের কিছু নেই, সেন্টমার্টিনের জনপ্রতিনিধিরা সবাই একযোগে কাজ করছেন। কোনো ধরনের সমস্যা হলে লোকজন সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে এনে রাখা হবে।
ইউএনও বলেন, আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে এখনো লোকজনকে সরিয়ে আনার মতো তেমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। গত ৫ দিন ধরে আবহাওয়ার পরিস্থিতি খারাপ। সেন্টমার্টিনে মালবাহী ট্রলারগুলো যেতে পারেনি। যার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও খাদ্য সংকটের দিকে যাচ্ছে। আশা করি, আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিকের দিকে যাচ্ছে। নৌবাহিনীর সঙ্গে কথা হয়েছে, হয়তো দ্রুত সময়ের মধ্যে খাদ্য পণ্যবাহী ট্রলার সেন্টমার্টিনে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
ডিজে