কলকাতায় সাবেক এমপি কমলের নাটকীয় জীবন, ক্ষমতার সিংহাসন থেকে ৩০ হাজারের ফ্ল্যাটে

ফিটনেস স্টুডিও, রান্নার ঝক্কি আর অনলাইন বৈঠক

ক্ষমতাচ্যূত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর কেটে গেছে পুরো এক বছর। কিন্তু সেই পতনের ধাক্কা আজও তাড়া করে ফিরছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। একসময় ক্ষমতার অজেয় আসনে থাকা এই দল এখন ছিন্নভিন্ন, ভীত আর দিশাহীন। নিজেদের রক্ষা করতে শত শত নেতা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। কেউ পালিয়েছেন যুক্তরাজ্যের অভিজাত এলাকায়, কেউবা আশ্রয় নিয়েছেন মালয়েশিয়ার অচেনা শহরে। তবে সবচেয়ে বড় ভিড় জমেছে ভারতের কলকাতায়।

কলকাতায় সাবেক এমপি কমলের নাটকীয় জীবন, ক্ষমতার সিংহাসন থেকে ৩০ হাজারের ফ্ল্যাটে 1

অচেনা নগরীর ভাড়া করা ফ্ল্যাটে কিংবা বন্ধুর শোবার ঘরে দিন কাটছে তাদের। বাইরে বের হওয়া মানে ভয়—ভরসা বলতে কেবল পর্দার ওপারে অনলাইন বৈঠক। সকালে জিম, দুপুরে নিঃসঙ্গতা, রাতে গোপন আলোচনায় ভবিষ্যতের হিসাব—এটাই এখন নির্বাসিত আওয়ামী লীগ নেতাদের রুটিন। সম্প্রতি বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হয় এবং এর ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্ট জানাচ্ছে, শুধু কলকাতাতেই নয়, পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছেন অন্তত ১ হাজার ৩০০ নেতা–কর্মী। একসময় যারা মিছিলের সামনের সারি দখল করতেন, আজ তারাই অচেনা রাস্তায় নিজেদের আড়াল করে বাঁচতে শিখছেন।

এই নির্বাসিতদের অন্যতম কক্সবাজার–৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক হুইপ সাইমুম সরওয়ার কমল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য প্রিন্টকে দেওয়া তার সাক্ষাৎকার থেকে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। পরে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করে, তিনিই ওই ‘কক্সবাজারের সাবেক এমপি’।

২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত টানা ১০ বছর কক্সবাজার–৩ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন কমল। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরপরই তিনি কলকাতায় পালিয়ে যান। সেখানেই এখনও অবস্থান করছেন। গত ডিসেম্বরে ভারতীয় চ্যানেল রিপাবলিক বাংলায় তাকে প্রথম প্রকাশ্যে দেখা যায়।

‘আমি ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠি এবং ঘরেই ফজরের নামাজ পড়ি। আওয়ামী লীগের আরেকজন সংসদ সদস্যের সঙ্গে আমি একটি থ্রিবিএইচকে [তিন শয়নকক্ষ, হল ঘর ও রান্না ঘর] অ্যাপার্টমেন্টে থাকি। নামাজের পর আমরা দুজনই পাশের একটি ফিটনেস স্টুডিওতে যাই, সেটি বেশ ভালো। আমি ভারোত্তলন করি, আর আমার ফ্ল্যাটমেট পিলাটিস নামের এক ধরনের ব্যায়ামের ক্লাস করেন।’ ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য প্রিন্টকে বলেন সাইমুম সরওয়ার কমল।

তিনি আরও জানান, নিউ টাউনে ভাড়া নেওয়া তাদের অ্যাপার্টমেন্টটি দেড় হাজার বর্গফুট আয়তনের, ভাড়া মাসে ৩০ হাজার রুপি। রান্নার লোক কিংবা গৃহকর্মীরা অনুপস্থিত থাকলে তাদেরই রান্না করতে হয়। ‘আমার রান্না করার অভ্যাস নেই। আমার ফ্ল্যাটমেটেরও একই অবস্থা। তাই যেসব দিনে আমরা রান্না করতে বাধ্য হই, সেসব দিনে আমি ঢাকায় থাকা আমার স্ত্রীকে ভিডিও কল করি। তিনি বিস্তারিত নির্দেশনা দেন। এটা আমার জন্য নতুন। যখন আমি বাংলাদেশে বাড়ি ফিরে যাব, কে জানে আমি হয়তো একজন শেফ হিসেবে নতুন পেশাজীবন শুরু করতে পারব।’ বলেন তিনি হাস্যরসের সঙ্গে।

দুপুরের খাবারের পর একটু বিশ্রাম নিয়ে তার সন্ধ্যা কাটে অনলাইনে। বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে প্রতিদিনই অনলাইন বৈঠক হয়, যেখানে রাজনৈতিক খবর আদান–প্রদান ও ভবিষ্যৎ কৌশল নির্ধারণ করা হয়।

তবে কলকাতায় ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গোপন দলীয় কার্যালয়’ থাকার খবর অস্বীকার করেছেন সাবেক এই সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, নিউ টাউনে আমরা একটি জায়গা ভাড়া নিয়েছি, যেখানে আমরা সবাই দেখা করি। কলকাতায় প্রায় ১ হাজার ৩০০ দলীয় নেতা আছেন। আমাদের পক্ষে তো সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বসার ঘরে সবাই মিলে বসা সম্ভব হবে না! কিন্তু এটিকে কার্যালয় বলা হলে সেটা অতিরিক্ত বাড়িয়ে বলা হবে।’

সাইমুম সরওয়ার কমল ২০২৩ সালের ২৪ জুন জাতীয় সংসদে ‘আওয়ামী লীগ কর্মীরা থাকতে ভারত ভাগ হবে না’—এমন মন্তব্য করে দেশজুড়ে হাস্যরসের খোরাক হন। ওই সময় সংসদে তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক মুক্তিযোদ্ধার কবর আমরা পশ্চিমবঙ্গে রেখে এসেছি। তাদের অনেক সৈন্যের কবর এ দেশে রয়েছে, একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম। সেই ভারত ভাঙতে শেখ হাসিনার কোনও কর্মী এখানে কোনও অপশক্তিকে ক্ষমতায় আসতে দেবে না।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm