চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড় ঘিরে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির যে কোনো চেষ্টা রুখতে মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী চন্দ্রনাথধাম কমিটির সঙ্গে বৈঠকে তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্টের ষড়যন্ত্র দেখা মাত্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বুধবার (২৭ আগস্ট) রেলভবনে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী চন্দ্রনাথধাম (কাঞ্চননাথ-চন্দ্রনাথ-আদিনাথ) স্রাইন কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এই নির্দেশ দেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এবং ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে স্রাইন কমিটির নেতারা জানান, পাঁচ বছর ধরে মন্দির ঘিরে বিভিন্ন ধরনের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড দেখা যাচ্ছে। সম্প্রীতির পরিবেশ নষ্টের অপচেষ্টা চলছে।
তাৎক্ষণিকভাবে বৈঠক থেকে তিন উপদেষ্টা মাঠ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে সজাগ থাকার নির্দেশ দেন। কোনো ধরনের উসকানির চিহ্ন দেখলে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
পাহাড়ে অবস্থিত মন্দিরে যাতায়াতের জন্য সিঁড়ির সংস্কার প্রয়োজন বলে জানান কমিটির সদস্যরা। স্রাইন কমিটির সভাপতি অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, সিঁড়ি এখন খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই। দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
এই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে চট্টগ্রামের স্থানীয় সরকার সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদীকে ফোন করে সিঁড়ি সংস্কারের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।
বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি নির্বিশেষে অন্তর্বর্তী সরকার সবার জন্য বৈষম্যহীন সমাজে নির্মাণে কাজ করছে।
ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘অন্য ধর্মের স্থাপনার ওপর যারা আক্রমণ করে, তারা কোনোভাবেই ধার্মিক হতে পারে না। এটা অপরাধ। এ কাজে কোনো ধর্ম নেই, অধর্ম রয়েছে। ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্টের কোনো ধরনের চেষ্টা হলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব। আমি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আহ্বান জানাই আপনারা নায্য দাবিদাওয়াগুলো মন্ত্রণালয়ে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট বরাবর পাঠান, আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।’
রেল উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘চন্দ্রনাথ মন্দিরের সঙ্গে ইতিহাস, ঐতিহ্য জড়িত। আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এমন কোনো উসকানিমূলক কার্যক্রম বরদাশত করা হবে না। কোনো ধরনের উসকানির চিহ্ন দেখলে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
পাহাড়ের সিঁড়ি সংস্কার দ্রুতই শুরু হবে
এদিকে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে অবস্থিত মন্দিরে যাতায়াতের জন্য সংস্কার কাজ দ্রুত শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, পাহাড়ের ১২০০ ফুট উঁচুতে হচ্ছে মন্দির। ওখানে সিঁড়ি বেয়ে যেতে হয়। ওই সিঁড়িটা যে অবস্থায় আছে সেটাকে আরো ডেভলপমেন্ট করা হবে। সেটার তাৎক্ষণিক আজকে তিনজন উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন যে, যাতে এই সিঁড়ির ডেভলপমেন্ট কাজটা খুব দ্রুত শুরু করা যায়।
শফিকুল আলম বলেন, চন্দ্রনাথ হচ্ছে আমাদের বাংলাদেশি হিন্দু ধর্মীয় ভাই-বোনদের সবচাইতে মহাত্বের জায়গা। এটা হাজার হাজার বছর ধরে সেই জায়গাটায় আছে। ওইখানে ৪০০ মন্দির আছে। আমাদের তিন উপদেষ্টা বললেন, চট্টগ্রামের ডিসি, পুলিশ এবং ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি বলে দেওয়া হয়েছে। কেউ ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চেষ্টা করলে বরদাস্ত করা হবে না।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামের ডিসি সীতাকুণ্ড ইউএনও সবার সঙ্গে কথাবার্তা বলা হয়েছে। এইখানে অন্য যে কোনো ধরনের সমস্যা যদি থাকে সেগুলো খুব দ্রুত রিজলভ করা হবে।