বন্দর ইস্যুতে দৃঢ় অবস্থানে সরকার, বিরোধিতাকারীদের প্রতিহতের আহ্বান

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া হলে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এ বিষয়ে ‘ভিত্তিহীন’ বিরোধিতা এবং ‘অপপ্রচারে’ কান না দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বিরোধিতাকারীদের ‘প্রতিহত’ করারও অনুরোধ জানান।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে রবিবার সন্ধ্যা ৭টায় রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বন্দর ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা যাদের আনছি, তারা যেসব দেশে কাজ করেছে, সেখানে কখনোই জাতীয় নিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়েনি।”

তিনি বলেন, “আমি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাই—আপনারা নিজেদেরকে ভিত্তিহীন বিরোধিতা এবং অপপ্রচারের শিকার হতে দেবেন না। অন্তর্বর্তী সরকারের বন্দর ব্যবস্থাপনার উদ্যোগে আপনাদের দৃঢ় সমর্থন অব্যাহত রাখুন। যারা বিরোধিতা করছে তাদের প্রতিহত করুন।”

সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মহলে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিএনপি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশ্লেষকরা এ নিয়ে নিরাপত্তা ঝুঁকির আশঙ্কা প্রকাশ করে সরকারের উদ্যোগের বিরোধিতা করছেন।

প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির ‘হৃৎপিণ্ড’, যা বর্তমানে অত্যন্ত দুর্বল। “এই অবস্থায় অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে অভিজ্ঞদের সহায়তা প্রয়োজন।”

তিনি জানান, বন্দর পরিচালনার জন্য বিশ্বের সেরা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সরকার আলোচনা করছে। এর মধ্যে রয়েছে দুবাই পোর্ট ওয়ার্ল্ড, এপি মুলার মার্স্ক এবং পোর্ট অব সিঙ্গাপুর অথরিটি।

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আমরা চাই, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হোক। তাই বিনিয়োগ পরিষেবা উন্নয়নের পাশাপাশি বন্দর ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়ন করা জরুরি।”

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, “যদি ২০৩১ সালের মধ্যে আমরা বন্দরের কাজ শিখে ফেলি, তাহলে ২০৩৬ সালের মধ্যে এই কোম্পানিগুলোর পরিচালিত বিশ্বের অনেক বন্দরে বাংলাদেশিরা নেতৃত্ব দেবেন।”

ভবিষ্যতের কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আপনারা যে বন্দরেই পা দেবেন, দেখবেন সেখানে বাংলাদেশিরা আছেন। বহু লোকের চাকরির সুযোগ তৈরি হবে।”

নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আগে যখন জাহাজে উঠতাম, দেখতাম নাবিক চট্টগ্রাম কিংবা সিলেটের। বন্দরের কাজ একবার শিখে নিতে পারলে ভবিষ্যতে বিশ্বের যেকোনো বন্দরে আমরা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারব।”

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, আধুনিক বন্দর শুধু দেশের অর্থনীতিতেই নয়, বরং নেপাল, ভূটানসহ আশপাশের দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।

চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথাও তুলে ধরে তিনি বলেন, “কুমিরা থেকে টেকনাফ পর্যন্ত উপকূলীয় অঞ্চলে নানা বন্দর, শিল্পাঞ্চল এবং আধুনিক সামুদ্রিক শিল্প গড়ে উঠবে। আধুনিক পদ্ধতিতে সমুদ্র থেকে মাছ আহরণ, চাষ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের শিল্পের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।”

এই লক্ষ্যে বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে এবং ইতোমধ্যেই তারা উৎসাহব্যঞ্জক সাড়া দিয়েছে বলেও ভাষণে জানান মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি দেশবাসীকে অনুরোধ করেন, “দেশের ভবিষ্যতের জন্য যেকোনো গুজব বা অপপ্রচারে কান না দিয়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সক্রিয় সমর্থন দিন।”

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm