মুসলমানের হাতে লুকিয়ে আছে গুনাহ মাফের চাবি!

ইসলামের দৃষ্টিতে মুসাফাহার ফজিলত

ইসলাম এমন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা যাতে মানব জীবনের সকল দিক ও বিভাগ নিয়ে রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা। মানুষের সামাজিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মুসাফাহা। সাক্ষাতের সময় মুখে সালাম আর হাতে হাত মেলানোকে মুসাফাহা বলা হয়। এটা মুসলিম সভ্যতা-সংস্কৃতির একটি অংশ। মুসাফাহা দ্বারা হিংসা-বিদ্বেষ ও অহংকার দূর হয়। একে অন্যের প্রতি মহব্বত বাড়ে। সর্বোপরি ছোট ছোট গুনাহ মাফ হয়ে যায়।

মুসাফাহার ফজিলত

মুসাফাহা হৃদয়ে বন্ধন জোড়ে গুনাহ মাফ করে। এক মুসলিমের সাথে আরেক মুসলিমের সাক্ষাতে সালাম বিনিময়ের পর প্রথম কাজই হল মুসাফাহা। দুই হাতের মিলন হৃদয়কেও ছুঁয়ে যায়, জুড়ে দেয় হৃদয়ের বন্ধন, ঘুঁচে যায় দূরত্ব। মাফ হয় গুনাহ। মহান আল্লাহতাআলাও চান যে এক মুমিন আরেক মুমিনের সঙ্গে এমনই কাছাকাছি থাকবে, অন্তরঙ্গ থাকবে। ফলে মুসাফাহা আল্লাহর কাছে অনেক পছন্দের আমল। এর কারণে আল্লাহ খুশি হন এবং তাদের মাফ করে দেন।

হাদিসের আলোকে মুসাফাহা

হজরত বারা ইবনে আজেব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-“সাক্ষাৎকালে যখন দুজন মুসলিম মুসাফাহা করে তখন তারা পৃথক হওয়ার আগেই তাদের মাফ করে দেওয়া হয়।”

মুসাফাহার আমল সালামের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নাত। যেমনিভাবে সালামের সময় একে অপরের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তার দোয়া করে থাকেন। ঠিক তেমনি মুসাফাহার সময় একে অপরের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া করতে থাকেন। আর বলতে থাকেন-
“ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়া লাকুম” অর্থ: আল্লাহতাআলা আপনাদের এবং আমাদের ক্ষমা করুন।

গুনাহ মাফের উপায়

সালমান (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আরো এসেছে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“কোনো মুসলমান যখন অন্য মুসলমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং মুসাফাহা করে তখন উভয়ের গুনাহ ঝরে যায়। যেভাবে প্রবল বাতাসে শুকনো গাছের পাতা ঝরে যায়। যদিও বা তাদের গুনাহ সাগরের ফেনা সমপরিমাণ হয়।”

হারাম মুসাফাহা

মনে রাখতে হবে হারাম মুসাফাহা করা যাবে না। যেমন-কোনো পুরুষ কোনো গায়রে মাহরাম নারীর সঙ্গে মুসাফাহা করা। এটি মারাত্মক গুনাহ। আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“তারা আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করবে না” – এ আয়াত পাঠ করে স্ত্রীলোকদের কাছ থেকে বায়আত নিতেন। তিনি আরো বলেন যাদের হাতে হাত দেওয়া বৈধ এমন মহিলা বাদে রাসুল (সা.) এর হাত অন্য কোনো মহিলার হাত স্পর্শ করেনি।

নবীজির শিক্ষা

আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন:
“কোনো একসময় জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করল হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের কোনো ব্যক্তি তার ভাই কিংবা বন্ধুর সঙ্গে দেখা করলে সে কি তার সামনে ঝুঁকে (নত) যাবে? তিনি বলেন, না। সে আবার প্রশ্ন করল তাহলে কি সে গলাগলি করে তাকে চুমু খাবে? তিনি বলেন না। সে এবার বলল তাহলে সে তার হাত ধরে মুসাফাহা (করমর্দন) করবে? তিনি বলেন হ্যাঁ।”

মুসাফাহার পদ্ধতি

সুন্নত পদ্ধতি

মুসাফাহা করার সুন্নত পদ্ধতি হলো উভয় হাত দিয়ে মুসাফাহা করা। যদিও ইদানীং কেউ কেউ এক হাতের পক্ষে কথা বলেন। ইবনে ওমর (রা.) বলেন:
“রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কাউকে বিদায় দিতেন তখন তার হাত ধরে মুসাফাহা করতেন। ওই ব্যক্তি হাত সরিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত নবীজি নিজের হাত সরিয়ে নিতেন না।”

দোয়া পাঠ

মুসাফাহা করার সময় এই দোয়া পাঠ করা উত্তম:
“ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়া লাকুম” (আল্লাহতাআলা আপনাদের এবং আমাদের ক্ষমা করুন)

মুসাফাহা কয় হাতে করবে

  1. এক হাতে মুসাফাহা করবে। অর্থাৎ শুধু ডান হাত দিয়ে মুসাফাহা করবে।
  2. দুই হাতে মুসাফাহা করবে। অর্থাৎ ডান হাতের সাথে বাম হাতও যোগ করা হবে।

তবে এক হাতে করার ব্যাপারে বেশি শক্তিশালী দলিল পাওয়া যায়। তবে কেউ যদি দুহাতে মুসাফাহা করে তাতেও কোন দোষ নেই। এক হাতে বা দুহাতে-এ নিয়ে কোন বাড়াবাড়ি করা ঠিক হবে না। মুসাফা করলেই গুনাহ মাফ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

সমাপ্তি

আল্লাহতাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহতাআলা মুসলিম উম্মাহকে দেখা-সাক্ষাতে সালাম বিনিময়ের পর পরস্পরে হাত মেলানোর মাধ্যমে হৃদয়ে সম্পর্ক গড়ার এবং গুনাহমুক্ত জীবনের জন্য মুসাফাহার আমল ও পরস্পরের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া করার তাওফিক দিন। আমিন।

লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm