চট্টগ্রাম নগরে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। মূল সড়কের যেখানে-সেখানে পার্কিং, অনিয়ন্ত্রিত গতির কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এসবের পরও টনক নড়ছে না পুলিশের। বেশ কয়েকটি জায়গায় একেবারে পুলিশ বক্সের সামনেই যেন পার্কিং জোন বানিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে এসব রিকশা। মাঝেমধ্যে এসব রিকশার বিরুদ্ধে দায়সারা অভিযান চালায় পুলিশ। এসব কারণে প্রায় যানজট লেগে থাকে মূল সড়কগুলোতে। মূলত সন্ধ্যার পর থেকেই সড়কে দাপট বাড়তে থাকে এসব ব্যাটারিচালিত রিকশার। এছাড়া ব্যাটারিচালিত রিকশার পাশাপাশি প্যাডেলচালিত রিকশাগুলোর নিয়ম না মেনে সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সরেজমিন দেখা গেছে, নগরীর ব্যস্ততম বাদামতলী মোড়, চকবাজার, মুরাদপুর, জিইসি, দুই নম্বর গেট, এক্সেস রোডের মুখে সারি সারি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দাঁড়িয়ে আছে। অনেকগুলো আবার নিয়ম না মেনে ব্যস্ত সড়কের উল্টো পথে যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। বেপরোয়া গতিতে একটি আরেকটিকে ওভারটেক করছে। প্রতিটি মোড়ে দায়িত্ব পালন করছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। কিন্তু তারা যেন দেখেও না দেখার ভান করে আছেন। আবার আগ্রাবাদের বাদামতলী ও চকবাজারের গুলজার মোড়ের পুলিশ বক্সের সামনেই পার্কিং করে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কয়েকটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। রিকশার সঙ্গে পুলিশ বক্স থেকে লাকি প্লাজা মোড় পর্যন্ত চার চাকার লেগুনাও মূল সড়কের দুই তৃতীয়াংশ দখল করে যাত্রী তুলছে। পেছনেই তৈরি হয়েছে যানজট।
তবে সকালে এসব রিকশার উৎপাত কম থাকলেও বিকালের পর থেকে সড়কে বাড়তে থাকে এসব গাড়ির সংখ্যা। এছাড়া নগরীর সিটি গেট মোড়, অলংকার টু বড়পোল রুটে রাত নামলেই দাপট বাড়ে এসব রিকশা। দ্রুত গতিতে মূল সড়কে বড় বড় কাভার্ডভ্যান, বাস, ট্রাকের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে চলাচল করে।
মূল সড়ক ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন অলিগলিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব ব্যাটারি রিকশা। ফলে প্রতিদিনই পথচারীরা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ব্যাটারি রিকশা চকবাজারের কাপাসগোলার খালে পড়ে যায়। এতে রিকশায় থাকা দুই যাত্রী বাঁচলেও মারা যায় ছয় মাস বয়সী এক শিশু। এর পাঁচ দিন পর ২৩ এপ্রিল যাত্রীসহ হালিশহর থানার গলাচিপা পাড়ার মহেশখালে উল্টে পড়ে আরেকটি ব্যাটারিচালিত রিকশা। ওই সময় চালক ও যাত্রীদের উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রায় ৫০ হাজার অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা। চলতি বছরের এপ্রিলে প্রায় ২৯০০ রিকশা জব্দ করা হয়।
বাদামতলীর সড়কের পাশের কয়েকজন দোকানির সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, প্রতিদিনই এই মোড়ে লম্বালম্বিভাবে ৮ থেকে ১০টি রিকশা স্ট্যান্ড করে দাঁড়িয়ে থাকে। আর লেগুনাগুলো বেপরোয়াভাবে মূল সড়ক দখল করে যাত্রী তোলে। এতে প্রচুর যানজট সৃষ্টি হয়।
স্থানীয়দের ভাষ্য, সন্ধ্যার পর থেকেই আগ্রাবাদ মোড়ের পুলিশ বক্সের সামনেই দাঁড়িয়ে থাকে ব্যাটারিচালিত রিকশা। এতে পুলিশ দেখেও যেন না দেখার ভান করে।
তবে এসব বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি সিএমপি ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের টিআই (প্রশাসন) শাহ আরিফুর রহমান। তিনি জানান, এই বিষয়ে বক্তব্য নিতে হলে তাদের পিআরও’র সঙ্গে করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) আশফিকুরজ্জমান আক্তারকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে ক্ষুদেবার্তা দিলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।